কাটা জিনিস জোড়া লাগে না! এ তো কথাতেই আছে। অথচ আমরা কোনো মতে জুড়েই কাজ চালিয়ে নিই। মধ্যবিত্ত অভ্যাস বলে কিন্তু এড়িয়ে যেতে পারবেন না আপনিও! কারণ, খবর আপনিও রাখেন। এই ধরুন, সারা ভারতে লোকাল ট্রেন বাড়াবার ক্ষেত্রে বড়ো সমস্যা ট্রেন চালাবার লোক নেই, অথচ চড়ার লোকের অভাব নেই। ফলে ধারণক্ষমতার দশগুণ লোক নিয়েই সে চলছে। অফিস টাইমে শহরের কাছাকাছি মফসসল থেকে যারা প্রতিদিন ট্রেনে ওঠেন, তারা সারা জীবনে বসার সিট ছেড়ে দিন, শেষ কবে দরজার থেকে চার-পা ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন তা গুনে বলে দিতে পারবেন। সমাধান সকলেই জানেন, কিন্তু ওই যে বললাম, চালক নেই। আমাদেরও হেলদোল নেই। ভিড়ের চাপে হাত ফসকাতে ফসকাতেই গালি দেন সিস্টেমকে (যাকে আমরা জীবিত অবস্থায় চোখে দেখতে পাই না) আর পরক্ষণেই সহযাত্রীকে বলে ওঠেন, একটু অ্যাডজাস্ট করে নিন দাদা, পড়ে যাব যে! গোটা জীবন কেটে যায় একটা ভালো সিস্টেম দেখবার আশায়। শোনা যায় তার পিতৃপুরুষও চলে গেছেন এমনই এক স্বপ্ন নিয়ে। এই আছে অথচ নেই সিস্টেমই ‘হাতকাটা’র প্রধান চরিত্র।

২০১৭ সালের প্রবল গরমে দিল্লি এসেছি, আমার প্রথম ছোটগল্পের বই ‘শান্তিরামের চা’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে। খুব ইচ্ছে হল একখানা পাঞ্জাবি কিনি। শো-রুমে ঢুকেই দেখি অনেক ক্রেতা অথচ সেলসপার্সেন নেই। হাজারটা কাউন্টার, কিন্তু তাতে পাঞ্জাবি দেখাবার লোক মাত্র হাতে গোনা। যে ছেলেটি আমাদের পাঞ্জাবি পায়জামা দেখাচ্ছিল, সে একই সঙ্গে আরও চারজনকে দেখাচ্ছে। পছন্দ-না-হওয়া জামাকাপড়গুলো গুছিয়ে ফেলবার আগেই জমে যাচ্ছে আরও কয়েকটা। ফলে টেবিলের ওপর অপছন্দের জামাকাপড়ের পাহাড় এমন ঝাঁচকচকে শো-রুমে বেশ বেমানান। অথচ দুনিয়ায় কাজ করবার লোকের অভাব নেই। অর্থনীতি শাস্ত্রে এ-নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। কিন্তু সমাধান অধরা। মুনাফার ভাড়ে ভাড়ার পূর্ণ হয় না। কারণ অর্থনীতি সম-অধিকারকে মান্যতা দেয় না। ওদিকে এসবের চালক নির্বিকার। তারা কোম্পানি হায়ার করেন স্বপ্ন বিক্রি করবার জন্য। ভাড়ার কোম্পানি লিখে দেয় ভাষণে কী বললে কী ফল আসবে! হিসেব অঙ্কের মতো মিলে যায়। যদিও কাটা অর্থনীতি জোড়া লাগে না। লাগবার কথাও নয়, সে কথা শুরুতেই বলেছি। তবু এসবের মধ্যেই আমরা বাঁচি। বলা ভালো, আমাদের বেঁচে থাকার ঠিক তলায় এগুলো বয়ে চলে। সভ্যতা এই সত্যকে ঢেকে রাখবার টেকনিক শিখিয়ে দিয়েছে মানুষকে। আর এই ফল্গুকে খানিক চাক্ষুষ করবার জন্যই লিখতে বসেছিলাম ‘হাতকাটা’।

২০১৯-এ যখন লেখা শেষ করলাম, প্রথমে নিজেও বিশ্বাস করিনি যে এমন হয়। তবে সময়, তিনি ছেড়ে কথা বলবেন কেন! বিশ্বাস তিনি করিয়েই ছাড়লেন। ফলে প্রকাশ পেল বই আকারে। ২০২১-এ লকডাউনে যখন কিরীটীদার মাথায় ঘুর ঘুর করছে যে এই উপন্যাসটাকে অনুবাদ করলে কেমন হয়, তখনও আমি সন্দিহান। অন্য ভাষার মানুষ রিলেট করবে? আসলে আমি নিজেও যে কূপ-মুক্ত নই! মালতীদির প্রাথমিক পাঠপ্রতিক্রিয়ায় খানিক বিশ্বাস হল। এই সিউডো-ঝিকিমিকি জীবনে অভ্যস্ত অন্য দুনিয়া কেমন করে দেখে এই অন্ধকারকে তা জানবার প্রবল আগ্রহে বসে আছি এখন।

এককালে বিশ্বাস করতাম গল্পকার নিছক ধারাভাষ্যকার নন। আজকাল অবিশ্বাসও করতে পারি না। আগামীর জন্য আমার চোখে-দেখা এই সময়কে ধরে রাখাটাই আমার আসল উদ্দেশ্য। আর প্রতিদিন নিজেকে সেখানেই তীক্ষ্ণ করে তোলার আয়োজন চলে, যাতে এই দেখা আর লেখার মধ্যে ফারাক না থেকে যায়। তবে কি এ-লেখা এ-সময়ের জন্য নয়? অনুবাদক মালতী মুখার্জি ওঁর বিবৃতিতে লিখেছেন, “Never again will you be able to walk into a showroom without wondering if the counter salesman is struggling to meet a daily target and what will happen if he fails? Never again will you watch a young boy peddling lottery tickets at a railway platform without wondering if he’s managing to get a square meal a day.” আজকের জন্য এটুকুই। আগামীতে যদি দিন বদল না হয়, এক হাতহীন মনুষ্য প্রজাতির অপেক্ষায় থাকুন।

 

Redundant, the English translation of Bitan's Haat Kata, by Malati Mukherjee, is now available on Amazon across the world. 

Have you ever looked at an ordinary person on the street and wondered what their struggles are, what their stories might be? Two young lives, one selling lottery tickets and another selling garments, struggle to fulfill their dreams. In their daily toil, they live with the hope of a brighter day yet try to find meaning in the darkness. Redundant will compel you to listen to their heart-breaking stories, marvel at their brave treading of paths we would hesitate to walk on and force you to become part of the struggling pedestrian’s reality. There is no letting up — no happy endings, just life in all its authenticity.

'Bitan Chakraborty’s short novel in Bengali, Haat Kata, comes to us in a fine translation by Malati Mukherjee. Redundant is about two characters we may pass by in a city without a second glance; they would do the same. These characters are motivated by the same desires that motivate the rest of us — to make it, try our best not to end up as losers, at least not in our own eyes. Bitan Chakraborty shows that every person is complex, every person is heroic, every person is unique and worthy of our consideration, our attention.' — GJV Prasad (Academic, Critic, Writer, and Translator)

Leave Comments

Please Login or Register to post comments

Comments